উপন্যাস -বোতামঘর
লেখক -স্মরণজিৎ চক্রবর্তী
প্রথম প্রকাশ - ১৪২৯
এই বছর শারদীয়া আনন্দ বাজার এ পড়লাম লেখক স্মরণ জিৎ এর লেখা বোতাম ঘর উপন্যাসটি। ও পড়ে ঠিক করে ফেললাম একটা রিভিউ লিখবো। আপনারা যারা এই লেখক এর বুক পড়েছেন তারা সকলেই জানেন যে প্রতি বছর উনি একটি দুর্দান্ত প্রেমের উপন্যাস লেখেন। আলোচ্য উপন্যাস টি তার ব্যতিক্রম না।
বইটি শেষ করে উঠে এক অপার ভালোবাসায় মনটি ভরে গেলো। বইটি দুটি পর্ব নিয়ে লেখা। একটি পর্ব ১৯৮৩ সাল এ। ও দ্বিতীয় পর্ব টি ২০২২ সালে। এবার আসা যাক কাহিনী প্রসঙ্গে। গল্পে শুরুতে আমরা দেখতে পাই মুসাফির নামক চরিএ টি কে রে নিজের বাবার দোকানে সেলাই এর কাজ করে ও ছোট্ট ছোট্ট ছিদ্র করে নিপুন হাতে বোতামঘর তৈরি করে। সেখান থেকে ১৯৮৩ সালের পটভূমিতে দেখতে পাই দুটি ভাইকে তারা দুজন লেক এর ধারে বেড়াতে এসেছে। একজন সৌর ও অপরজন জুলু। তাদের লেখক বলেছেন ব্যাটম্যান ও রবিন বলে তারা একে অপরের পাশে সারাজীবন থাকবে।
এর পর দেখা যায় ছয় বছর পরের ঘটনা যেখানে আমাদের উপন্যাস এর দুই নায়ক বড়ো হয়েছে। একজন তখন প্রতিষ্ঠিত ও অপর জন উচ্চ মাধ্যমিক দেবে। আমাদের গল্পের নায়ক এখানে জুলু যে ভালোবাসে ওপালিকা কে কিন্তু ওপালিকা জুলু কে ভালোবাসে না।
সে তখনকার সমেয়ের চেয়ে যথেষ্ট আধুনিকা। যে ভালবাসা বলতে বোঝে শুধু শরীর । শরীর এর ভালোবাসা শেষ টো সেই ছেলের প্রতি তার ভালোবাসা শেষ। এমন এক মেয়ের প্রতি ভালোবেসে সে অবহেলা করে আমাদের গল্পের নায়িকা বেলা কে। যে একজন উড়নচণ্ডী টাইপ এর মেয়ে যে কিট পতঙ্গ ভালোবাসে। ভালোবাসে ছোটো ছোটো মিনি কনস্ট্রাকশন বানাতে আর ভালোবাসে জুলুকে।
অপরদিকে বেলাকে ভালোবাসে এক আশ্চর্য চরিত্র বুচা যে কথা বেশি বলে ও সব সময় হাসিখুশি দিল দরিয়া টাইপের একজন চরিত্র। অপরদিকে সৌর তে সমাজে তে একজন নামজাদা সব কিছুটে সফল। পাড়ার সব কিছু টে সবাই তাকে ডেকে।সবাই চাই তার মতো হতে।
এই দেখে তার সাথে গায়ে পড়ে বিবাহের পস্তাব নিয়ে যায় গুন্ডাদা যে একজন প্রকৃত অর্থে সমাজ সেবি হিসাবে পরিচয় দিলে ও একজন ক্রিমিনাল ছাড়া কিছু না।সৌর সম্মতি ছাড়া তার সঙ্গে তার বোনের বিয়ের ব্যবস্থা করে ফেলে।
এই ভাবে গল্প এগিয়ে চলে এবং কিছু পড় আসে নতুন এক চরিত্র লুনাদিদি যে রাশিয়া থেকে আসে তার স্বামী মারা গেছে। ও ছোটো একটি মেয়ে সন্তান। আর আছে কিছু চরিত্র যারা উপন্যাস এর প্রয়োজনে এসেছে। তাদের মধ্যে আলোজেঠু। তে তাদের বাড়িতে আশ্রিত বেলার সাথে খারাপ ব্যবহার করে ও তাকে অন্যায় ভাবে কাছে পেতে চায়।
১৯৮৩ ক্রিকেট পরিবেশে উপন্যাস এ এগিয়ে চলে। বেলা যেমন দুলুকে ভালোবাসে তেমন জুলু ওপার প্রতি। ভালোবাসার এক টানা পরণ ও নিজের ভালোবাসার মানুষ কে না পাওয়ার কষ্ট।
এখানে একসাথে চারটি চরিত্র পাশাপাশি একে অপরকে ভালোবাসে। কে তার ভালোবাসার মানুষ কে পায়। আর কে হারিয়ে ফেলে।
তাছাড়া প্রথম পর্বের শেষে সৌর মারা যায়? কি করে মারা যায় সৌর কেন মারা গেল সৌর কে তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করলো। আর কেন রবীন ব্যাটম্যান পাশে থাকলো না? কেন জুলু নিজেকে অপরাধী মনে করলো আর কি এমন করলো তে সে নিজেকে অপরাধী ভাবছে।
এইসব জানতে চাইলে আমাদের পড়ে দেখতে হবে এই বছর শারদীয়া আনন্দ বাজার এ প্রকাশিত এক দুর্দান্ত উপন্যাস বোতামঘর।
বোতামঘর রেটিং
আমি ব্যাক্তিগত ভাবে এই উপন্যাস কে ১০ এর মধ্যে ১০ দেবো।
review
উপন্যাস - বোতামঘর
লেখক - স্মরণজিৎ চক্রবর্তী
বই - শারদীয়া আনন্দবাজার, ১৪২৯
সংস্করণ - ডিজিটাল সংস্করণ
রিভিউ লিখেছেন - শুভজিৎ বিশ্বাস
স্মরণজিৎ চক্রবর্তীর উপন্যাস 'বোতামঘর' এ সৌরদা, মুসাফির, জুলু আর বেলা কখন যে বাস্তব চরিত্রের রূপ নিয়েছে তা উপন্যাসটি পড়তে গিয়ে ধরতেই পারলাম না। এই সমগ্র উপন্যাসটি আমাদের গল্প বলে, আমাদের সেই চেনা গল্প যেখানে উচ্চমাধ্যমিকের গোপন ত্রিকোণ প্রেম, যৌনতা বা বন্ধুত্বের খুনসুটি সবটাই। কখনও কখনও এই সব চরিত্রের মধ্যে ভীড় করে প্রধান চরিত্রের অধিকার পেতে চাই আলোজ্যেঠুর মতো মানুষের, কখনও কখনও গুন্ডাদা, মিঠুদি বা ওপারও প্রয়োজন পড়ে যারা শেষটুকু হয়ত সুন্দর চায়। দরকার পড়ে আরও চরিত্রের যারা গল্প বলে বেঁচে থাকার....
সমগ্র উপন্যাসটি দুটি খন্ডে বিভক্ত। প্রথম অংশ যখন গল্পের প্রধান চরিত্র জুলু আর বেলা উচ্চমাধ্যমিকে পড়ে এবং পরবর্তী অংশ তার ঊনচল্লিশ বছর পরে জীবনের শেষ পর্যায়ে.....
কখনও কখনও সৌর দের হতে হয় প্রেমের আঁতুড়ঘরে আমিষ খাওয়া মানুষ। আসলে সমাজ যাদের'কে ভগবানের স্থানে বসায় তারা কি সত্যিই ভগবান নাকি তারা রাক্ষস, সেই প্রশ্নের উত্তর এই উপন্যাসে পাওয়া যাবে তবে এটা সত্যি প্রত্যেকটি বোতামের জন্য একটা করে বোতামঘর ধার্য্য থাকে। ভালোবাসার গায়ে ভাগ্যের পরিহাসে সকালের রোদ না পড়লেও বিকেলের রোদ ঠিক পড়বেই।
উপন্যাসটি পড়তে পারেন, এককথায় অসাধারণ। স্মরণজিৎ চক্রবর্তীর লেখা এই প্রথমবার পড়েই মানুষটার প্রতি যে ভালোবাসার জন্ম হয়েছে তা আগামীর কোনো সংখ্যায় কমবে না, বরং কয়েকশত গুন বেড়ে যাবে।
Tags
Indian