মৃত কৈটভ - সৌরভ চক্রবর্তী Mrito Koitov: Sourov Chocroborti

উপন্যাস: মৃত কৈটভ
লেখক: সৌরভ চক্রবর্তী 
জঁর: মিথোলজি-সায়েন্স ফিকশন থ্রিলার
প্রকাশক: বিভা পাবলিকেশন
মুদ্রিত মূল্য: ২২২/-
পৃষ্ঠা সংখ্যা: ১৯৯
রেটিং: ৪.৫/৫
মৃত কৈটভ - সৌরভ চক্রবর্তী Mrito Koitov: Sourov Chocroborti

মৃত কৈটভ কাহিনী সংক্ষেপ

ত্রিপুরার এক পাহাড়ি গ্রাম। গ্রাম লাগোয়া এক বিশাল অরণ্য। সেই অরণ্যে কারো প্রবেশাধিকার নেই। উপজাতি গ্রামবাসীরা মনে করেন যে জঙ্গলে বিষ আছে। কেউ যদি নিষেধ অবজ্ঞা করে জঙ্গলে প্রবেশ করে, সে চিরতরে হারিয়ে যায়। গ্রামবাসীরা এক বিশেষ ক্রিয়া পালন করেন। সেই ক্রিয়া যতটা অদ্ভুত ততটাই ভয়ানক। গ্রামবাসীদের বিশ্বাস জঙ্গলে তাদের দেবতার বাস। দেবতা জাগলেই বিপদ। ত্রিপুরা সরকার রবার চাষের জন্য জঙ্গল অধিগ্রহণ করতে চাইলো। সেই কাজের জন্য বনবিভাগ পাঠালো দুদে ফরেস্ট অফিসার রামানুজ-কে। শুরু হলো সরকারের সঙ্গে গ্রামবাসীর সরাসরি সংঘর্ষ।


গ্রামে রয়েছে এক অদ্ভুত আবাসন। সেখানে কী শিক্ষা দেওয়া হয় ছাত্র-ছাত্রীদের? জঙ্গলের ভিতরে কারা থাকে? হেমন্তাই কে বিশ্বাসঘাতকতা কে করেছে? বিষ্ণুপুরাণের সঙ্গে গ্রামের সম্পর্কই বা কী? সমস্ত প্রশ্নের উত্তর রয়েছে অরণ্যের গভীরে। অরণ্যই এই উপন্যাসের প্রধান চরিত্র। অরণ্যই নায়ক, অরণ্যই খলনায়ক!!

সৌরভ চক্রবর্তী মৃত কৈটভ সম্পর্কে লেখক এর কথা

প্রথমেই বলি, এই উপন্যাসটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক প্রেক্ষাপটে রচিত। তবে 'মৃত কৈটভ' লেখার কথাটা কীভাবে মাথায় এল একটু বলে রাখি। আমার একটা অভ্যাস বা বদভ্যাস যাই বলুন, সেটা হলো যে কোনো পৌরাণিক কাহিনি যা বাজারে উঠতে বসতে আমরা শুনে থাকি, সেই কাহিনিগুলোর শুরু ও শেষ পুরাণ গ্রন্থে খুঁজে বের করা। এরকমই এক রাতে প্রহ্লাদ আর নরসিংহ দেবতার কাহিনির শেষ কোথায় তা খুঁজছিলাম। হিরন্যকশিপুকে বধ করার পর নরসিংহ দেবের কী হলো, তিনি কোথায় গেলেন এই প্রশ্নগুলো মাথায় এসেছিল। আর সেই খোঁজ করতে গিয়ে অনুসন্ধান পেলাম এক বিশাল কাহিনির। শিবপুরাণ এবং বিষ্ণুপুরাণে এই একই কাহিনির আলাদা আলাদা ভাষ্য আমার মনে কৌতূহলের জন্ম দিল। সেখান থেকেই জন্ম হল “মৃত কৈটভ' উপন্যাসের।


লেখার সময় আমি পুরাণের উল্লেখ যথাযোগ্যভাবে বিভিন্ন স্থানে করেছি। হেমন্তাই চরিত্রের মুখে সমস্ত কাহিনির সটীক উল্লেখ রেখেছি কাহিনির মাধ্যমেই। সেখানেই উল্লেখ করে দিয়েছি কোন পুরাণের কোন অধ্যায়ে এই ঘটনাগুলোর উল্লেখ রয়েছে। কাহিনি শেষে তথ্যসূত্রেও সেই গ্রন্থগুলোর উল্লেখ করে দিয়েছি যেগুলোর সাহায্য এই কাহিনি লেখার সময়ে নিয়েছি। এত তথ্য প্রমাণাদির পরেও যে কাহিনিটি আমি লিখেছি তা সম্পূর্ণ কাল্পনিক। ত্রিপুরায় না এরকম কোনো উপজাতি সম্প্রদায় রয়েছে না রয়েছে এরকম এক অরণ্য। কাহিনির প্লট নির্মাণের খাতিরেই আমি এরকম কাল্পনিক এক উপজাতি গ্রাম এবং অরণ্যের আশ্রয় নিয়েছি। আমার রাজ্যের উপজাতি ভাই বোনদের প্রতি বাল্যকাল থেকেই আমার ভালোবাসা অক্ষুন্ন ছিল এবং থাকবে।

এই কাহিনিতে আমি ত্রিপুরা এবং রাজধানী আগরতলার প্রায় অজ্ঞাত সংক্ষিপ্ত ইতিহাস নিয়েও আলোচনা করেছি। ঐতিহাসিক তথ্যাদি আমি যেরকম পড়েছি ও জেনেছি এবং আমার অভিজ্ঞতায় দীর্ঘ তিন দশকের অধিক সময়ে যা দেখেছি তার ভিত্তিতেই এই লেখা। তথ্য সূত্রে কিছু গ্রন্থের উল্লেখ করলাম।বিভা পাবলিকেশনের অন্যতম সৈনিক শ্রীমান অভিজিৎ খাঁ বহুদিন আগেই আমাকে একটি পাণ্ডুলিপির জন্য অনুরোধ করেছিলেন। এত কাল পর আমি কথা রাখতে পেরেছি বলে ভালো লাগছে। এই কাহিনি মূলত ওঁর জন্যেই লিখে উঠতে পেরেছি। ধন্যবাদ ও ভালোবাসা জানাই সংস্থার কর্ণধার শ্রী অনিমেষ প্রামাণিক মহাশয়কে। তিনি আমাকে উপন্যাসটি লেখার ক্ষেত্রে উপযুক্ত সময় এবং স্বাধীনতা দিয়েছিলেন।


আমার পরিবারের ভালোবাসা ছাড়া এই উপন্যাস লিখতে পারতাম না। এই উপন্যাস আমি আমার শ্রদ্ধেয় শ্বশুরমশাইকে শ্রী সুকুমার চন্দ্র ঘোষকে উৎসর্গ করেছি। শ্রীবিষ্ণু তথা শ্রীকৃষ্ণ-র প্রতি তাঁর ভাব, ভালোবাসা, ভক্তি আমাকে মুগ্ধ করে। ত্রিপুরায় আগরতলার শ্রীকৃষ্ণ মন্দিরের প্রতি তাঁর অধ্যাবসায় শিক্ষনীয়। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, তিনি আগরতলার বিখ্যাত শ্ৰীকৃষ্ণ মন্দিরের ফাউন্ডার মেম্বারদের অন্যতমও বটে। তাই শ্রীবিষ্ণুর এক প্রায় অজ্ঞাত রূপের উল্লেখ যেহেতু এই গ্রন্থে রয়েছে তাই তাঁর এক বড় ভক্তকেই এই গ্রন্থ উৎসর্গ করা সমীচীন বলে মনে করলাম। ওঁর দীর্ঘায়ু কামনা করি।

পরিশেষে বলি, বাংলা ভাষায় কার্যত পাঠক পছন্দ করেনি এরকম এক বিষয় নিয়ে এবার লিখলাম এই গ্রন্থে। কোন বিষয়ের কথা বলছি তা আপনারা পড়া শুরু করলে ধীরে ধীরে বুঝতে পারবেন। এটা আমার নিজের কাছেও একটা বড় চ্যালেঞ্জ ছিল যে এরকম একটা প্রায় অচল ধারণাকে নিয়ে কীভাবে বাংলায় একটা উপন্যাস লিখতে পারি। বহুদিন ভেবে আমি পুরাণ এবং রহস্য-রোমাঞ্চের আশ্রয় নিয়ে কাজটা করলাম। যদি আপনাদের এই লেখা ভালো লাগে তবে যারপরনাই আনন্দিত হবো এবং আগামীতেও এরকম পরীক্ষা নিরীক্ষা চালিয়ে যাবো। সেক্ষেত্রে হয়তো পরবর্তীকালে এই উপন্যাসের সিক্যুয়েল আসবেই। আর কী, পাঠ শুভ হোক।

মৃত কৈটভ রিভিউ

প্রচ্ছদ এবং অলংকরণ: ব‌ইটির প্রচ্ছদ এবং অলংকরণ করেছেন যথাক্রমে স্বর্ণাভ বেরা এবং কৃষ্ণেন্দু মন্ডল। নামদুটো এইজন্যই উল্লেখ করলাম কারণ ব‌ইটির প্রচ্ছদ এবং তাতে "মৃত কৈটভ" এই লেখাটার অলংকরণ দুটোই ব‌ইটি পড়তে আগ্ৰহী করবে।

প্রচ্ছদে একটা অন্ধকার জঙ্গলে দেখা যাচ্ছে যার মাঝে একটা অদ্ভুত মূর্তি, মূর্তির দুটো মাথা এবং দুটোই ঈগলের কিন্তু বাকি শরীরটা মানুষের শুধু মানুষ বললে ভুল বলা হবে রীতিমতো শক্তপোক্ত পেশীবহুল শরীর সাথে মূর্তির আকার সাধারনের থেকে যথেষ্ট বড়ো এবং লম্বা সাথে জঙ্গলে একজন মুন্ডিত মস্তক, গেরুয়া কাপড় পরিহিত পুরুষের পিছনদিকটা দেখা যায় যার হাতে একটা দন্ড এবং পাত্রে উজ্জ্বল সবুজ রঙের একটা পদার্থ আছে।

সারাংশ: কলকাতার ছেলে রামানুজ যে পেশায় একজন ফরেস্ট অফিসার যে অল্প সময়েই প্রমোশন পেয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রক পর্যন্ত পৌঁছে গেছে যেটা তাঁর সিনিয়র রাজীব ত্রিবেদীর মতে তাঁর যোগ্যতার প্রতিফল। রামানুজকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রক ত্রিপুরায় একটা প্রজেক্ট দিয়ে পাঠায় যেখানে রাজ্য সরকার রবার চাষ করতে চায় তাই রামানুজকে ওখানে গিয়ে সরেজমিনে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে রিপোর্ট দিতে হবে।


রামানুজের সিনিয়র রাজীব ত্রিবেদী জানান এ ওখানে এক রহস্যময় জঙ্গল আছে এবং জঙ্গলের ঠিক বাইরে গ্ৰামে একটা ট্রাইবের লোকজন বসবাস করে যারা এই একবিংশ শতাব্দীতেও আধুনিক পৃথিবীর থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। অগত্যা রামানুজ অনিচ্ছাসত্ত্বেও সেখানে যায় এবং গিয়ে সহকর্মীর থেকে রামানুজ জানতে পারে ওই ট্রাইবের লোকজন ওই জঙ্গলে বাইরের কাউকে ঢুকতে দেয় না কারণ তারা বিশ্বাস করে সেখানে তাদের দেবতা অবস্থান করছেন এবং কেউ সেখানে প্রবেশ করলে সে আর ফিরে আসে না দেবতা তাকে নিজের ভোগ হিসেবে গ্রহণ করেন, কিন্তু কোন দেবতা সেটা তারা বাইরের কারো কাছে প্রকাশ করে না এমনকি মূর্তিও দেখায় না আর নাম‌ও বলে না।  যথারীতি রামানুজ‌ও জঙ্গলে ঢুকতে গিয়ে গ্রামবাসীদের দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হয় ফলে রামানুজ ক্ষিপ্ত হয়ে ঠিক করে এই রহস্য ভেদ করবেই।

কি করবে এবার রামানুজ? সত্যিই কি ওই জঙ্গলে কোনো দেবতা অবস্থান করছেন যিনি অনধিকার প্রবেশকারীকে ফিরতে দেন না নাকি পুরোটাই গ্রামবাসীদের কোনো মনগড়া কাহিনী যেটা কোনো বিশেষ উদ্দেশ্যে ছড়ানো হয়েছে? জানতে হলে পড়তে হবে সৌরভ চক্রবর্তীর লেখা "মৃতকৈটভ"। শুধু রহস্য নয় লেখক এই উপন্যাসে আমাদের হিন্দু মিথোলজির একটা নতুন দিক উন্মোচন করেছেন যেটা একটা ঘটনাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। যেটা রহস্যের সাথে উপন্যাসকে নতুন মাত্রা দিয়েছে।

পুনশ্চ: উপন্যাসটির শুধুমাত্র প্রথম ভাগ নিয়েই রিভিউ লিখলাম। রিভিউটি সম্পূর্ণ আমার ব্যাক্তিগত মতামত, ভুলত্রুটি হলে ক্ষমা প্রার্থী।

সাবধান পাঠক, দেবতার ঘুম ভাঙছে
ত্রিপুরার এক জঙ্গলে গ্রামবাসীদের দেবতা থাকেন। দেবতা নিজের ভোগ নিজেই চয়ন করেন। উপজাতি গ্রামবাসী ছাড়া কারোর সেই জঙ্গলে প্রবেশাধিকার নেই। সেই গ্রামকে কেন্দ্ৰ করেই এই রোমহর্ষক কাহিনি। এই কাহিনি এক রোমাঞ্চকর অনুসন্ধানের যা শেষ হচ্ছে বিষ্ণুপুরাণের এক অজ্ঞাত অধ্যায়ে।

boi

Post a Comment

Previous Post Next Post