লাস্ট ট্রাম - বিশ্বদীপ দে Last Tram - Biswadip Dey

লাস্ট ট্রাম
বিশ্বদীপ দে 
বৈভাষিক
মূল্য - ১৮৫/-

লাস্ট ট্রাম কাহিনী

লাস্ট ট্রাম - বিশ্বদীপ দে Last Tram - Biswadip Dey

একদিন ডানা পাবে আমাদের বিষণ্ণ লাস্ট ট্রাম। আপাতত লেখায় এসে মিশে যাক জীবনানন্দ থেকে লাভক্র্যাফট, ব্ল্যাক হোল থেকে মহীনের ঘোড়া, বড়ে গোলাম আলি থেকে বার্গম্যান... রূপকথার সমস্ত মিসিং লিংক। 


নিজের লেখায় লেখক সর্বশক্তিমান। নিজের পাঠে পাঠকও তাই। এখানে কেউ ছোটো বা বড়ো নন। দু'জনে মুখোমুখি বসে। তাঁরা কথা বলছেন। নাহ্। আসলে তাঁরা দাবা খেলছেন। তাঁদের ঘিরে রয়েছে ঘুমের ভিতরে থাকা সমুদ্রসৈকতের মতো নির্জনতা।

লাস্ট ট্রাম সূচীপত্রঃ

রাত্রির কোরাস ১১ 
ছায়াবাড়ি ১৭
যদি ২৯ 
লাস্ট ট্রাম ৩৩
রূপকথার মিসিং লিংক ৩৭
চৈত্রের কাফন ৪৮
১৯ রানআউট ৫৭
পথচলতি লেখা ৭০
ব্রহ্মাণ্ড পাড়া, নক্ষত্র লেন ৮১

লাস্ট ট্রাম রিভিউঃ

" আমার বাড়ি ফিরতে ইচ্ছে করছে "  এই শব্দগুলোর মধ্যে অদ্ভুত এক তৃপ্তি আছে। আমার যে একটা বাড়ি আছে। তাতে মাঝেসাঝে আমার ফিরতে ইচ্ছে করে; এটা একটা অন্যরকম নিশ্চয়তা দেয়। কোথাও একটা আশ্রয় আছে, কোথাও গিয়ে দুদণ্ড শান্তিতে বসা যায় - এ এক অপার আশ্বাস। এও একধরনের সুখ বই কি। বিশ্বদীপ দে - র লাস্ট ট্রাম গদ্য সংকলনে ' ছায়া বাড়ি ' পড়তে গিয়ে বারবার মনে হয়েছিল এমন কিছু কথা। আমারও এইরকম একটা বাড়ি ছিল। সেখানেও এরকম কত কথা জমে ছিল। যার জন্য আমিও ওপরের ছয়টা লাইন লিখেছিলাম কোনসময়.. সেই বাড়িতে বহু বছর পর গিয়ে মনে হয়েছিল সব কিছুই অনেক অনেক ছোট হয়ে গেছে। 


তখন পৃথিবীকে দু ফুট উচ্চতা থেকে দেখতাম বলে বোধ হয়। লাস্ট ট্রাম কোনো গদ্য সংকলন নয়। একটি চিত্র কল্প। দর্শক যেভাবে সিনেমাকে দেখে - প্রতিটা শট অনুধাবন করে। লেখক এখানে প্রতিটা শটকে ফ্রিজ করেছেন, অভিনেতার স্টান্স পাল্টে দিয়েছেন - কিন্তু কখনই সামনে আসেন নি। তৃতীয় এক ব্যক্তির মত ঘটনা প্রবাহকে বইতে দিয়েছেন। আমরা - পাঠকরা চিরজীবনই প্রত্যক্ষ করে গেছি - নিঃশব্দে।  ' রাত্রির কোরাস ' - এ এসেছে লাভক্র্যাফটের অতীন্দ্রিয় নৈশ জগৎ। রাত বোধহয় এমন ভাবেই আমাদের পৌঁছে দেয় অনাকাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে। 

'যদি ' - মনে করায় জীবনানন্দের চলে যাওয়ার পথকে। যদি সেদিন ট্রামটা কোনো জাদুবলে ব্রেক কষে থেমে যেত - যদি মহাজাগতিক কবি অনন্ত থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নজর দিতেন পার্থিব জগতের দিকে --- এ আক্ষেপের শেষ নেই।  ' ৯৯ রান আউট ' - আমাদের মত ক্রিকেট প্রেমীদের কাছে একটা রত্ন। ডোনাল্ড আর ক্লুজনারের সেই যুগলবন্দীটা মনে আছে ?ডোনাল্ড তো দৌড়ালেনই না। কেন দৌড়ালেন না তিনি? লাস্ট বল। জেতা বা হারা - ছুটতে তো হতই। হতভম্ব লেখক ও। ক্রিকেটের মত ঈশ্বর হয় নাকি? জাদু পালক, মায়া কাঠি সব ভুলিয়ে যে ইতিহাস লেখে। লিখছি যখন ২২ বছরের সদ্য যুবক ব্রিটিশ বোলিং লাইনআপকে হেলায় উড়িয়ে টেস্টে ছক্কা মারছেন। 


লিটল মাস্টার তো বলেই দিয়েছেন "জশস্বী ভবঃ"।  ক্রিকেট আসলে কাদের মনে রাখে? জয়ী না পরাজিতকে। মতি নন্দীর মত বলা যায় - "ক্রিকেটের প্রতিটা বল ধরে খেলাটির আলোচনা করা যায়"।  প্রতিটা বল একটা ইতিহাস। T20 র যুগেও ভীষণ সত্যি এই কথা। ' পথচলতি লেখা ' - ভীষণ সুন্দর এক অনুভূতির প্রকাশ। এখানেই লেখক পাঠককে ডুয়েলে আহ্বান করেছেন। এসো - বসো - বোঝো আমায়। বলো আমার পরের চাল কী?  " লাস্ট ট্রাম" এমনই একটা কথোপকথন। লেখক ও পাঠকের মধ্যে অনন্তকাল ধরে এই মুহূর্তের সৃষ্টি হয়ে চলেছে। লেখক তুলে ধরেছেন অবজ্ঞার মুহূর্তগুলো, ক্ষমা করে দিয়েছেন যাদের - সেই নিঃসঙ্গতার অনুভূতিদের তুলে দিয়েছেন পাঠকের হাতে।


বই থেকে ধার নিয়ে বলি "এসো লাস্ট ট্রামের মত সহনশীল হই। .... তোমার জন্মদিনের কথা ভুলে গিয়েছিল যারা, তাদের জন্মদিনে প্রকাণ্ড মোমবাতি কিনে আনতে হবে তো।"  শ্রেষ্ট বক্তব্যও তাই শেষের জন্য। 'ব্রহ্মাণ্ড পাড়া, নক্ষত্র লেন' । এই ঠিকানায় এসে লেখক ও পাঠক এক হয়ে যায়। বালকবয়সে যে তারাগুলিতে লেখক ঘর খুঁজতেন - সেখানে বহুবছর পর টাইম ট্রাভেল করে পাঠকও পৌঁছে যায়। অতীত - বর্তমান - ভবিষ্যতের বৃত্তাকার টাইমলাইনে আমরা যে একসাথেই পথ হাঁটছি। ঠিক করেছিলাম রিভিউ লিখব না। খারাপ - ভালো সেটা অন্য কেউ বলুক।  আমি শুধু অনুভূতিটুকু-ই লিখতে চেয়েছি। বইটা আমার মনে থাকবে বহুদিন।

❤️ রেটিং: ৪/৫  

~ নিশা মিত্র

boi

Post a Comment

Previous Post Next Post