ভাসানবাড়ি - সায়ক আমান Bhasanbari by Sayak Aman

বইয়ের নাম: ভাসান বাড়ি
লেখকের নাম: সায়ক আমান 
প্রকাশনীর নাম: বিভা পাবলিকেশন
জঁর: সায়েন্স-ফিকশন, রোম্যান্টিক থ্রিলার 
মূল্য: ২৪৪ ₹
পৃষ্ঠা সংখ্যা: ২২৪
ভাসানবাড়ি - সায়ক আমান  Bhasanbari by Sayak Aman

শিরোনাম: শেষ হয়েও হইল না শেষ

মৃত্যুই কি জীবনের শেষ গন্তব্য? সময়কে যদি ইচ্ছে মত থামিয়ে দেওয়া যেত তাহলে কি প্রকৃতির যা কিছু সত্য, প্রাচীন সব উল্টে পাল্টে যেত ? চোখের সামনে যা কিছু অপ্রত্যাশিত  তাকি সবই কল্পনা, নাকি ধোঁয়াশার ভিতর চিরসত্য হয়ে বেঁচে থাকা অলীক বাস্তব!!

রেটিং:৩.৮/৫

সারাংশ: ঝাঁ চকচকে শহরের বুকে বড় হওয়া (গল্পের প্রধান চরিত্র) হৈমন্তী পেশায় একজন রিপোর্টার। এক বিশেষ রহস্য উদঘাটনের জন্য তার আগমন ঘটে ভাসান বাড়িতে। সেখানে এসে তার দেখা হয় অশ্বিনীর (অন্যতম প্রধান চরিত্র) সাথে যে নিজেকে বাড়ির কেয়ারটেকার নিবারণ বাবুর ছেলে হিসেবে পরিচয় দেয়। একই বাড়িতে ধীরে ধীরে দুজনে নিজেদের সাহচার্য উপভোগ করে, কিছু না বলেও জানো অনেক কিছু বলে দেয় এই ভাসান বাড়ি। মায়ায় জড়াতে ভয় পাওয়া হৈমন্তীও ক্রমে অশ্বিনী আর এই বাড়িটার সাথে জুড়ে যায়। নিবারণ বলে এই বাড়ি সকলের আয়ু শোষণ করে নেয়। তবে কি হৈমন্তীও এই বাড়িতে নিজেকে বিলিয়ে দেবে চিরতরে। অশ্বিনী কে‌ ঘিরে এত রহস্যের জাল কীভাবে সৃষ্টি হচ্ছে? কার জন্যে অনন্তকাল অপেক্ষা করে থাকে অশ্বিনী? এই বাড়িতেই বা কি এমন রহস্য আছে যার জন্য সময় এখানে অন্য খাতে চলে!


লেখক গল্পের ভূমিকাতেই স্বীকার করেছেন এটি নামে সায়েন্স - ফিকশিন থ্রিলার হলেও আসলে 'আদ্যোপান্ত প্রেমের গল্প'। তবে এতে বইটিতে সায়েন্স ফিকশনের প্রভাব কোনো ভাবেই কমে না। গল্পে যে মহাজাগতিক থিওরি উঠে এসছে তা নিঃসন্দেহে বইয়ের গুণমান বৃদ্ধি করেছে। টাইম ডায়ালেশন, ডার্ক ম্যাটার, ব্ল্যাক হোল, ফার্মি প্যারাডক্স, চিড়িয়াখানা বা জু হাইপোথিসিস এরকম অসংখ্য তত্ত্বের নাম উঠে এসেছে বারবার। গল্পে উল্লেখিত গবেষক আনন্দ চৌধুরীর  "where is everybody?" ট্যাগ লাইনের বক্তব্য আপনার বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব সম্পর্কে  অনজ্ঞ মনকেও নাড়া দিয়ে যাবে।

 সায়ক আমানের একটি বিশেষ গুণ হল গল্পের মধ্যে এমন ভাবে সায়েন্স-ফিকশন সম্পর্কিত নানা তথ্য তুলে ধরে যা মনকে সত্যি বলে ভাবতে বাধ্য করে, চাইলেও এই অংশটুকু এড়িয়ে যাওয়া যায় না। যেমন তার লেখা 'কুয়াশার ফুল' বইতেও কিছুটা এমন vibe পেয়েছি। অশ্বিনী-হৈমন্তীর জুটি নিশ্চিতরূপে সকলের মনে জায়গা করে নেবে। তবে তাদের সম্পর্ক আর পাঁচটা গল্পের প্রেমিক-প্রেমিকার মত নয়। প্রিয় জনের বিয়োগ এখানে শোকের বদলে বিরহ ও অপেক্ষা বয়ে আনে। গল্পের জনপ্রিয় লাইন..."হৈম চলে গেছ?" তা যেন গল্পে অন্য মাত্রা এনে দিয়েছে। এখানে চলে যাওয়া প্রসঙ্গ সাময়িক বিরহের কথা বলে।কারণ "শেষ হয়েও হইল না শেষ" কিছু কিছু মানুষের গল্প। 


         গল্পের বুনন, ভাষার ব্যবহার ও আবেগে মাখামাখি কলকাতার রূপ উপন্যাসে অন্য মাত্রা এনে দিলেও কিছু বিষয়ে খামতি রয়ে গেছে। গল্পের শেষটা পাঠকের মনে বিশেষ আলোড়ন ফেললেও, মনে কাঁটার মত বিঁধতে থাকা কিছু সংশয় রেখে গেছে। ভাসানবাড়ি ধ্বংস হওয়ার আগে নিতাই ও নিবারণের মৃত্যু যদি অশ্বিনী ও হৈমন্তীসহ পুরো বাড়িটার অস্তিত্ব ভোলার জন্য ঘটে থাকে তবে গনশা কেন বাদ গেল?? একটা বাড়ি রাতারাতি পুড়ে যাওয়া, নিতাই, নিবারণের নিখোঁজ হওয়া গ্রামের মানুষের মনে সত্যিই কি কোনো প্রশ্ন  জাগাবে না? অশ্বিনী বলেছিল হৈমন্তী জন্মানোর দিন সে প্রথম ভাসান বাড়িতে পা রাখে; এ কথাটা অশ্বিনীর মুরারিমোহন ও শশাঙ্কমোহনবাবুর সময়কালে তার একাধিক বার উপস্থিতে ভুল বলে প্রমাণিত হয়। 

হৈমন্তী একজন সৎ, নিষ্ঠাবান চরিত্র যে নিজের ভাইরাস আক্রান্ত রক্তের মাধ্যমে অন্যের ক্ষতি করতে চায় না অথচ তার ভাসান বাড়িতে রহস্য উদঘাটন করতে আসা এবং তা ভুল হাতে তুলে দিতে চাওয়া, চরিত্রের একেবারে বিপরীত দিক তুলে ধরে।  ফিজিক্সের ছাত্রী হৈমন্তী যার ছোটবেলায় বিজ্ঞান নিয়ে আগ্রহের শেষ ছিল না। তার মুখে বিজ্ঞান আর ফিলোসফির বক্তব্যের ওপর বিরক্ত ভাব প্রকাশ করা হাস্যকর লাগলো। অশ্বিনী সময়ের আওতায় পড়ে না, সে যখন‌ খুশি যেখানে যেতে পারে এসব বুঝলাম কিন্তু ভুতের মত অন্যের শরীরে যখন তখন প্রবেশ করা লেখকের একটু বেশি খামখেয়ালীর অর্থহীন শব্দ খরচ বলে মনে হল। এছাড়া অশ্বিনীর এমন অনেক কাজের যথার্থ উওর মেলে না।


      গল্পটি আমার বেশ ভালো লেগেছে, কিছুটা অন্য ধাঁচের ছোঁয়ায় লেখা রোম্যান্টিসিজম আর  সায়েন্স ফিকশন ঘরানার বইটি টানটান থ্রিল না জোগালেও একেবারে নিরাশ করবে না। তবে বইটি প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য রেকমেন্ড করব। বইয়ের বেশ কিছু কথোপকথন কিশোরদের জন্য নিষেধাজ্ঞা জারি করে।
সবশেষে লেখকের কথায় বলব...
"ভাসানবাড়ি আপাতত ফাঁকা, আগুন লেগে ধ্বংস হয়ে গেছে সমস্তটা, কদিন পরেই হয়তো ভাঙা পড়বে। তাও এর পোড়া দেওয়ালে কান রাখলে গল্প শুনতে পাবেন। অশ্বিনী আর হৈমন্তীর গল্প... সময়ের গল্প... "

রোজকার ব্যস্ত জীবনে গল্পের বই পড়ার সময় খুব একটা হয়ে ওঠে না। রোজ একটু একটু করে পড়তে পড়তে অবশেষে শেষ করলাম এই গল্পের বইটা। সায়ক আমান - একটি জনপ্রিয় নাম।  আমি মিডনাইট হরর স্টেশন এর নিয়মিত শ্রোতা।  ওনার লেখা অনেক গল্প শুনেছি কিন্তু এই প্রথম ওনার লেখা আমি পড়লাম। 
গল্পের প্রধান দুই চরিত্র - হৈমন্তী এবং অশ্বিনী।  হৈমন্তীর ভাসানবাড়িতে যাওয়ার পর একের পর এক রহস্যময়  ঘটনা ঘটেছিলো।অশ্বিনী এক রহস্যময় চরিত্র। গল্পের শুরুতে বেশ ভালোই লাগছিলো।মাঝে একটু ঘেটে গেলাম - বিশেষ করে সায়েন্টিফিক ব্যাপার গুলো পড়ে (এতে লেখকের বা লেখার কোনো ত্রুটি নেই - আমার মাথা মোটা তাই বুঝতে পারিনি)। শেষে হৈম এর জন্য কষ্ট হচ্ছিলো। মনটা খারাপ হয়ে গেলো শেষটা পড়ে। তবে বেশ কিছু রহস্যের কিনারা হলো না। যাইহোক বইটি পড়তে ভালোই লাগলো।  আপনারা যারা বইটি পড়েন নি তারা পড়েদেখতে পারেন।আশাকরি খারাপ লাগবে না।  
 
রেটিং : কারুকে রেটিং দেওয়ার মতো যোগ্যতা আমার নেই।তাই কোনো রেটিং দিলাম না।

রিভিউটি লিখেছেনঃ Koushik

বইয়ের নাম _ ভাসানবাড়ি 
লেখক_সায়ক আমান 
পাবলিকেশন _ বিভা পাবলিকেশন 
প্রথম প্রকাশ _ জানুয়ারি ২০২০
মূল্য_২৪৪ টাকা
পৃষ্ঠা সংখ্যা _২২৪
জনরা_ রোমান্টিক থ্রিলার

কিছু কিছু বই আছে যে বই আপনি পাঠ করার পর সেই বইটির রেশ আপনার মধ্যে থেকে যায়। আপনি সেই বইটির চরিত্র গুলোর সাথে বাস্তব জীবনের মিল খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করবেন।এটা তেমন একটা বই যে বইটা পড়ার পর আপনি সাময়িক ভাবে কষ্ট পেতে পারেন। সায়ক আমান একজন বলিষ্ঠ লেখকদের মধ্যে অন্যতম। আমি যেসব লেখকদের লেখা পড়ার জন্য অধীর ভাবে অপেক্ষায় থাকি তাদের মধ্যে তিনি অন্যতম। তার প্রতিটা লেখা মধ্যে একটা জাদু আছে। এই লেখাটি তার ব্যাতিক্রম না  আর উপন্যাস টি শেষ করার পর আর রিভিউ না দিয়ে পারলাম না তাই একটা রিভিউ নিয়ে চলে এলাম।

"তোমারেই যেন ভালোবসিয়াছি,
শত রূপে শত বার...
জনমে জনমে, যুগে যুগে অনির্বার।"
এই একটি লাইন যেনো বইটা ব্যাখ্যা করছে।
আরো একটা লাইন আছে
"চলে গেছো হৈম"?

কিছু কিছু বই আপনাকে প্রচুর কষ্ট দিতে পারে।যদি আপনি সেই কষ্ট টা ফিল করতে পারেন। উপরের যেই লাইন টা বললাম। উপন্যাস টি শেষ হলে এই লাইন অব্দি যখন পৌঁছাবেন ততক্ষন এই উপন্যাস টি আপনার পড়া হয়ে গেছে। আর তখন আপনি জানতে পারবেন যে ভালবাসায় যে কষ্ট থাকে অপেক্ষা থাকে সেটা জীবনের কই জন মানুষ করতে পারে।

এই বার গল্পের বিষয় বস্তু নিয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করবো। কারণ আমি চাইবো প্রতিটা পাঠক এর প্রতিটা শব্দ প্রতিটা লাইন মন দিয়ে পড়ুক। এই গল্পের প্রধান চরিত্র দুটি হলো হৈমন্তী ঘোষ আর অশ্বিনী।

বিরাজপুর নামে পরিত্যক্ত একটা ২০০ বছরের রহস্যময় বাড়িতে উপস্থিত হয় হেরিটেজ সোসাইটি থেকে বাড়িটার ইতিহাস আর ভূগোল নিয়ে গবেষণা করার জন্য। সেইখানে তার সাথে আলাপ হয় বাড়ির কেয়ারটেকার অশ্বিনী সাথে। শুধু যে বাড়িটার বেপারে জানা না বাড়িটার সব রহস্য উদ্ধার করতে চায় হৈম। সে উপলব্ধি করে কোনো কারণে এই বাড়িতে সময় অদ্ভুত ভাবে থেমে রয়েছে। বইটিতে একদিকে আপনারা রহস্য উপন্যাস এর ফিল পাবেন।


তেমন পাবেন দুর্দান্ত একটা প্রেমের উপন্যাস। হৈম আর অশ্বিনী প্রেম এর পাশাপাশি তাদের অতীত লেখক দুর্দান্ত ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। চিরন্তন প্রেমের উপন্যাস হিসাবে বইটা আপনি আপনার উইশ লিস্ট এ রাখতে পারবেন। হৈম যে উদ্দেশ্য নিয়ে বিরাজপুর এ আসে ও আসতে আসতে যখন কাহিনী এগিয়ে চলে তখন বইটির চমক আপনাকে আশ্চর্য করবে।  সাথে আপনাকে ভাবতে বাধ্য করবে। এই বইটির অপর চরিত্র অশ্বিনী কে নিয়ে বেশি আলোচনা করলাম না। করলে স্পয়লার দেওয়া হবে। শুধু এটা বলতে পারি। অপেক্ষা অনন্তকাল অপেক্ষা করে সে আর শেষে ...... ?

এই বইটা কারো কারো একদম ভালো না লাগতে পারে। আবার কারো মনে হতে পারে এটাই তার পড়া শ্রেষ্ঠ প্রেমের উপন্যাস। তাই সবার কাছে আমার অনুরোধ রইলো আপনার অতি অবশ্যই এই উপন্যাসটি পড়ে দেখবেন আমি আপনাদের বলছি পাঠক হিসেবে এতো ভালো বই থেকে নিজেকে বঞ্চিত করবেন না।


রেটিং _ গল্পের পাতায় পাতায় লেখক আপনাদের ভাবতে বাধ্য করবে। ও গল্পের প্রতি অধ্যায় এ ভালোবাসার প্রমাণ দিয়েছেন। সত্যি বলতে কি এইই গল্পের কোনো রেটিং হয় না। শুধু গল্পের শেষে এ আপনাদের মন খারাপ হতে বাধ্য। ওহ শেষে বলি ভালবাসার মানুষ কে জীবন থেকে হারিয়ে যেতে দিতে নেই। আর হারিয়ে ফেলার যে কষ্ট সেটা অশ্বিনী মনে হয় সব চেয়ে ভালো জানে।

আমার রেটিং পারফেক্ট ১০ এর মধ্যে ১০ অবাক হবেন না গল্পটি পড়লে আমার সাথে আপনারা সহমত পোষণ করবেন।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: এই উপন্যাসটি আপনাকে প্রচুর কষ্ট দিতে পারে। তাই বইটা পড়ার পর আপনার কিছুদিনের জন্য অন্য বই পড়তে ইচ্ছা হারিয়ে যেতে পারে।

রিভিউটি লিখেছেনঃ Bapan Da

boi

Post a Comment

Previous Post Next Post