তাল ভৈরব - ডঃ তীর্থপ্রতিম দাশ Talbhairab: Dr. Tirtha Pratim Das

তাল_ভৈরব 
ডঃ তীর্থপ্রতিম দাশ

বর্তমানে যে খাজা ধারার বই বাজারে চলছে, এই বইটি সেই ধারারই বই। বইয়ের গল্পটা ছোটো করে বলেনি, অবশ্য বিশদে বলার গল্প নেইও। গল্পের নায়ক নৃপেন্দ্রকৃষ্ণ সোম কে তাঁর তবলায় অদ্ভুত দক্ষতার জন্য লোকে তাল ভৈরব বলে ডাকে। তিনি জীবনের নানান বিচিত্র ঘটনার মধ্যে দিয়ে কী করে এই জায়গায় পৌঁছলেন এই গল্প তারই বিবরণ।


এবার এই গল্পতে লেখক লা লিগাতে মেসির মতো দক্ষতা দেখিয়েছেন। মেসি যেমন ডিফেন্ডার কাটিয়ে গোল দেন, লেখক ও সমস্ত প্রচলিত নিয়ম পাশ কাটিয়ে পাঠক কে গোল দিয়েছেন। একটা মাঝ মাঠের ভেলকির উদাহরণ দি। এই যে নৃপেন্দ্র কৃষ্ণ সোম সে নাকি আসলে তারিণী খুড়োর গল্পের ন্যাপলা। এবার জাদু দেখুন। এই উপন্যাসটি ২০২৩ সালের পয়লা জানুয়ারি প্রকাশিত। উপন্যাস অনুযায়ী নৃপেন্দ্রবাবুর বয়েস ৭০+ অর্থাৎ ওঁর জন্ম ১৯৫০ এর আশেপাশে।


তারিণীখুড়ো প্রথম উপন্যাস প্রকাশ পায় ১৯৮৫ সালে, তাহলে তখন ন্যাপলার বয়েস হওয়ার কথা ৩৫-৩৬। কিন্তু সত্যজিতের বর্ণনা অনুযায়ী ন্যাপলার বয়েস তখন ১২-১৪. আমি নিশ্চিত তখন বয়সের ভারে সত্যজিৎ হিসাব গুলিয়ে ফেলেছেন। এই লেখকই ঠিক।

আরেকটা অনবদ্য ডিফেন্স চেরা পাশের নমুনা দেখুন। গল্পের এক জায়গায় বলছেন যে নায়ক তিনতাল ষোলোগুণে বাজিয়ে এমন বেকায়দায় এক নর্তকী কে ফেলে দেন যে সেই নর্তকী স্টেজে হার্ট অ্যাটাক হয়ে মারা যান। এবার যাঁরা গান জানেন তাঁরা বুঝবেন যে তিন তাল আদতে ১৬ মাত্রার তাল, সেটাকে ১৬ গুণ করে বাজানো হচ্ছে, অর্থাৎ প্রায় অসম্ভব, আবার নাকি বেনারসী ঠেকায়। তত্বগত ভাবে সম্ভব কিন্তু কেউ শুনেছে কিনা জানিনা। জাকির হুসেনের মধ্যে যে সিরিয়াল কিলার লুকিয়ে ছিলো আমরা জানতেও পারিনি।


এরপরে আসি দু-একটা অনুপ্রেরণা প্রসঙ্গে, যাকে দুষ্টলোকেরা চুরি বলে থাকে। বিভূতিভূষণের অমর মাতুপাগলীর দৃশ্য আর তারিণীখুড়োর কঙ্কালের সেই বিখ্যাত দৃশ্য প্রায় control C + Control V. এছাড়াও আছে বিভিন্ন নারীরা যারা সবাই সুন্দরী, সবাই যুবতী আর সবাই লেখকের সাথে শুয়ে পড়তে চায়। ন্যারেটর ও কাউকে নিরাশ না করে টারজানসম দক্ষতায় চামড়ার ওপরে নিজের আঙুলের কাজ দেখান। জানি জানি টারজান তবলা বাজাতো না, কিন্তু........

অবশ্য উপন্যাস শেষ করার পরে আমার মনে হলো হয়তো এটা একটা যুগান্তকারী উপন্যাস, আমিই ধরতে পারিনি। বার্গম্যান যেমন সেভেন্থ সিল সম্পর্কে বলেছিলেন যে সিনেমার কাজ শুধু গল্প বলা নয়, সিনেমা রূপক, ইঙ্গিত ও দৃশ্যর মাধ্যমে চেনা আখ্যান-কাঠামোকে ভেঙে আপনাকে প্রশ্ন করতে বাধ্য করবে।


এই উপন্যাস ও হয়তো আপনার সাহিত্য পাঠের ইচ্ছে কেড়ে নেবে, জীবন সম্পর্কে বীতশ্রদ্ধ করে তুলবে, হয়তো খাজা গল্প আর ফালতু প্লট দিয়ে আপনাকে বই বিমুখ করে তুলবে, সেদিক দিয়ে দেখতে গেলে ইনি বার্গম্যান লাইট। আপনারা চাইলে পড়তেই পারেন, তবে কিনা পাগলেও নিজের ভালো বোঝে।

boi

Post a Comment

Previous Post Next Post