ব্যাঙা - দীপাঞ্জনা দাস Byanga - Dipanjana Das

বই - ব্যাঙা 
লেখিকা - দীপাঞ্জনা দাস 
প্রকাশনী - বিভা পাবলিকেশন 
বিষয় - ভৌতিক 
মূল্য - ১৯৫ 
প্রচ্ছদ - যথাযথ 
রেটিং - ৯.৫  


এই যে, আবার আমি এসে গেছি আমাদের থ্রি মাসকেটিয়ার্সের লেখা তিনটি জমজমাট মাস্টারপিসের  দ্বিতীয় বইটির রিভিউ নিয়ে, অর্থাৎ দীপাঞ্জনা দাসের "ব্যাঙা" নিয়ে কিছু ভাট বকার জন্য।  আর বলবেন না মশাই, সারাদিন ধরে মার্কেটিংয়ের চাকরি সামলিয়ে টো টো কোম্পানি করে উঠে রাতবিরেতে হেদিয়ে বাড়ি ফিরে আর গপ্পো পড়ার মুড থাকে? কিন্তু না, এ হল আমাদের প্রিয় "ভূত ভূতুম" গ্রুপের তিন মহারথীর বই। তাই একটা আলাদারকম এনার্জি এসে যায় নিজে নিজেই। সেই এনার্জির উপর ভর করেই গত শনিবার রাত এবং রবিবারের সকাল মিলিয়ে পড়ে ফেলেছিলাম ত্রিজিত করের বইটি অর্থাৎ রাতে যার নাম নিতে নেই (রিভিউ আগেই দিয়েছি)। 


আর এবার সোমবার ও মঙ্গলবার রাত মিলিয়ে শেষ করলাম Dipanjana Das এর এই "ব্যাঙা" বইটি।  আচ্ছা, আপনারা কখনও ভয় পেয়েছেন, ভয়? অন্ধকারের ভয়? আঁধারের মধ্য থেকে উৎপন্ন নিখাদ একটা দমবন্ধ করা একটা চাপা ভয়, যা আপনাকে জবুথবু শীতের রাত্রেও জবজবে ঘামে একাকার করে ছাড়বে? যদি এইরকম ভয় কোনোদিন না পেয়ে থাকেন, তাহলে এই বইটি একবার পড়ে দেখতে পারেন। আমার কথার যথার্থতা বিচার করবেন বইটি পড়বার পর নিজের অবস্থার উপর ভিত্তি করে।   তিনটি গল্প, যা গড়ে উঠেছে একটি সুতোর উপর ভিত্তি করে, যা আলাদা হয়েও একসূত্রে গাঁথা। 

প্রথম গল্প "ভয় যখন সত্যি হয়" হল এই নাটকের সূচনামাত্র যা নিজের আবির্ভাবের মুহূর্তেই এক ভয়াবহ আবহের সৃষ্টি করে। দ্বিতীয় গল্প "ওখানে কেউ ছিল না" আগের কাহিনীর সূচনাটিকেই ব্যাপ্ত করে আরও অনেকখানি এবং এক ভয়াল ভয়ংকর ভিত্তিপ্রস্তরের উপর কাহিনীটিকে দাঁড় করিয়ে দেয়।  তৃতীয় কাহিনী "বন্ধু চেনা বিষম দায়" আকারে আগের দুটি কাহিনীর চেয়ে অনেকটা বড়। সত্যি বলতে কি, এই গল্পটি শুরু করার পর একটু যেন হতাশ হতে শুরু করেছিলাম। কারণ আগের দুটি কাহিনীর মত জমজমাট আবহ কোথাও যেন হারিয়ে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছিল আমার। কিন্তু না, এতো ছিল সবে কলির সন্ধ্যে। 

আসলে এই তৃতীয় কাহিনীটির সঙ্গে অনেকটা সীমিত ওভারের ক্রিকেটে রোহিত শর্মার ব্যাটিংয়ের তুলনা করা যায়। শুরুতে খুচরো খুচরো রান নিয়ে একটু সেট হওয়ার পরপরই একদম হাত খুলে চার ছয় হাঁকানো। এই গল্পটিও ঢিমেতালে, কিন্তু ঠাসবুনোট রেখে শুরু হওয়ার পর কাহিনী এগোনোর সাথে সাথে নিজের পুরোনো ফর্মে ফিরতে শুরু করে এবং ক্লাইম্যাক্স পর্যন্ত পৌঁছতে পৌঁছতে পাঠকের দম আটকে আসার উপক্রম হয়ে ওঠে। আর এই কাহিনীর পরিসমাপ্তিটিও খুবই সুন্দর এবং গল্পের শেষে লেখিকা কিন্তু খুব সুন্দর একটি বার্তা দিয়েছেন যা পাঠকের মন ছুঁয়ে যাবেই।

এই গল্পটির মূল ইউএসপি হল শুধুমাত্র আতঙ্ক। অন্যান্য গল্পের মত বিস্তৃত পটভূমি, রোমাঞ্চকর কাহিনিবিন্যাস, ঘটনার ঘনঘটা, পরতে পরতে চমক বা বহু চরিত্রের সমাবেশ এখানে অনুপস্থিত। কিন্তু তার বদলে সুনিপুণ দক্ষতায় লেখিকা পদে পদে সৃষ্টি করেছেন ভয়। সীমিত পটভূমি, দুই তিনটি টুইস্ট, সামান্য কয়েকটি চরিত্র এবং নিকষ কালো অন্ধকারের উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা এই কাহিনী আগাগোড়া উপহার দেবে এক সীমাহীন আতঙ্ক - সেই আতঙ্ক যা এই শীতের রাতেও ঘামে ভিজিয়ে দেবে আপনাকে, এক নিঃশ্বাসে দুরুদুরু বক্ষে কাহিনী শেষ করে ফেলার পরে সেই দুর্দান্ত আতঙ্কের অনুভূতির পাশাপাশি ছড়িয়ে দেবে  একমুঠো ভালোবাসার রেশ। 

নিজের অজান্তেই মুখ দিয়ে বেরিয়ে যাবে - যাহঃ, শেষ হয়ে গেল তো। গল্প তিনটির সম্পর্কে অনেক কিছুই বলতে পারতাম, কিন্তু হবু পাঠকদের মজা নষ্ট করতে চাইনা। তাই বলব, যদি শুধুমাত্র নিখাদ ভয় পেতে ভালোবাসেন, তাহলে এই বইটি আপনারই জন্য। ধন্যবাদ লেখিকা, আরও এইরকম অনেক অনেক কাহিনীর অপেক্ষায় রইলাম।

boi

Post a Comment

Previous Post Next Post