দেবগৃহের ত্রিকালজ্ঞ - প্রভাত দে সরকার Debogrihe Trikaloggyo - Provat Dey

 প্রভাত দে সরকার এর দেবগৃহের ত্রিকালজ্ঞ উপন্যাসটির রিভিউ পড়ুন।

সাত রাজার ধন মানিকজোড়
মানিক মোটেও ন‍ও।
ত্রিকাল যে জন বলে
তুমি তার উদরেই র‌ও।
ত্রিকালজ্ঞের ত্রিভুজ যখন একত্রে এক ঘরে
ঠিক তখনই জটায় দেবে বামেতে পাক জোরে
ওমনি তখন খুলে যাবে আলাদিনের ডেরা।
কালোকড়ি, উলটোমাথার খ্যাতি ভুবনজোড়া ।

এই ৮ টা লাইন‍ই যথেষ্ট ছিল ব‍ইটির প্রতি আমার আকর্ষণ জাগানোর জন্য। তবে সেকথা পরে বলছি, তার আগে একটু ভূমিকা দেওয়া প্রয়োজন। ছোটোবেলা থেকেই গুপ্তধন, ধাঁধা, মিস্ট্রি এগুলোর প্রতি আলাদা একটা ভালোবাসা রয়েছে, তাই আর কিছু না ভেবেই হাতে তুলে নিয়েছিলাম ‘দেবগৃহের ত্রিকালজ্ঞ'। সত্যি বলতে ব‍ইটিও কোনোদিক থেকে হতাশ করেনি।

ঐক্য বাসু পেশায় একজন ম্যাজিক ক্রিয়েটর হলেও তিনি মাইন্ড গেম, পাজল এগুলো সলভ করতে বেশ ভালোবাসেন। একদিন হঠাৎই তাঁর প্রাক্তন প্রেমিকা স্বাতী'র মাধ্যমে তাঁর হাতে আসে এমন‍ই এক রহস্য। স্বাতীর বস্ প্রভাকর সান্যাল জানান যে তাঁর বৃদ্ধ দাদার কাছে অজ্ঞাত কেউ পরপর তিনটি তাসের রাজা পাঠায়, যেগুলির প্রত্যেকটিতে সাংকেতিক ভাষায় কিছু কোড ছাপা রয়েছে। আর তার সাথেই বৃদ্ধের ঘর থেকে চুরি হয় দুটি ডায়েরি যেগুলিতে ধাঁধার আকারে লেখা ছিল তাদের পারিবারিক গুপ্তধনের হদিশ।

ফলে শুরু হয় ঐক্য এবং স্বাতী'র একত্রে এই গুপ্তধনের সন্ধান। কিন্তু কী সেই গুপ্তধন? তারা কি আদৌ তা পাবে? আর ওই সাংকেতিক কোড, ওগুলো কি হুমকি চিঠি? কে পাঠালো সেগুলো? সবকিছুর উত্তর দেবে রহস্য-রোমাঞ্চে ভরা এ উপন্যাস।

কাহিনীর প্রেক্ষাপট যেমন অসাধারণ তেমনি এর টানটান উত্তেজনা দারুণ উপভোগ্য। প্রতিটি পাতায় আপনি লেখকের সুনিপুণ লেখনী ক্ষমতা এবং তাঁর গবেষণার পরিচয় পাবেন। বিশেষত সাংকেতিক কোডগুলি ডিকোড করার পদ্ধতিটি অনবদ্য। তাছাড়া গল্পের মধ্যে কোনো অহেতুক তথ্য নেই, ঘটনাগুলিও কোনোভাবেই অতিরঞ্জিত নয়। এককথায় মেদহীন ঝরঝরে লেখা, যা একবার শুরু করলে শেষ না করে কোনোভাবেই থাকা যায় না।

আর একটা কথা বলতেই হয়, লেখকের কলমে দেওঘর আর প্র‍কৃতির বিবরণ। খুব কম লেখকই অচেনা জায়গাগুলিকে চোখের সামনে জীবন্ত ছবির মতো ফুটিয়ে তুলতে পারেন। প্রভাতবাবু তাঁদেরই একজন।

তবে কাহিনীর শেষ সমগ্র কাহিনীর তুলনায় একটু ফিকে লাগলেও উপন্যাসটির পাঠ-অভিজ্ঞতা সত্যিই অসাধারণ। ব‍ইটির বাঁধাই, পৃষ্ঠার মান যেমন ভালো তেমনি প্রচ্ছদটিও দুর্দান্ত। সাথে কিছু অলংকরণও রয়েছে। তাই প্রত্যেকের কাছেই অনুরোধ রইল বইটি পড়ার। লেখককেও জানাই অসংখ্য ধন্যবাদ। এমন‌ই আরও কিছু দুর্দান্ত লেখার আশায় রইলাম। ভালো থাকবেন।

দেবগৃহের ত্রিকালজ্ঞ
প্রভাত দে সরকার
বুকফার্ম
মুদ্রিত মূল্য - ২৪৯

দেবগৃহের ত্রিকালজ্ঞ কাহিনী সংক্ষেপ


ঐক্য বাসু একজন ম্যাজিক ক্রিয়েটর। নানান রকম ম্যাজিক তৈরির সাথে সাথে তার শখ নানান রকম ধাঁধা, পাজল বা কোড সল্ভ করা। ঐক্য মনে করে ম্যাজিক তৈরি করতে যেরকম মেধা ও পড়াশোনা দরকার সেই সবই আছে এইসব মাইন্ড-গেমে। কিন্তু তার প্রাক্তন প্রেমিকা স্বাতী মনে করে যে ম্যাজিকের রহস্য তৈরি করতে পারে সে রহস্যউন্মোচনও করতে পারে।

একদিন স্বাতীর সূত্র ধরে তার অফিসের বস দেওঘরের প্রভাকর সান্যাল ঐক্যর কাছে আসেন তাঁর অন্ধ বড়ো দাদার কাছে আসা বিশেষ কোডে লেখা তিনটে হুমকি দেওয়া তাসের রাজা নিয়ে। ঐক্য প্রথমে তাতে আমল না দিলেও পরে দেওঘরের সান্যাল বাড়িতে গিয়ে ডায়েরিতে লেখা একটা ধাঁধায় গুপ্তধনের অস্তিত্ব সম্বন্ধে নিশ্চিত হয়।

কিন্তু কে দিয়েছিল সেই হুমকি দেওয়া তাসের রাজা? বিশেষ কোডের অর্থই বা কী? ধাঁধায় লেখা গুপ্তধনই বা আসলে কী? এই সব কিছুর উত্তর লুকিয়ে আছে রহস্য রোমাঞ্চে মোড়া এই বইয়ের প্রতিটি পাতায় পাতায়।

boi

Post a Comment

Previous Post Next Post